বর্ষীয়ান রাজনীতিক, সংসদ উপনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই।
আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের এই কাণ্ডারী দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। রোববার মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সাজেদা চৌধুরী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা) সনে সংসদ সদস্য ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সঙ্কটকালীন সময়ে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি।
সাজেদা চৌধুরীর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।
উচ্চ রক্তচাপসহ বার্ধক্যজনিত নানা সমস্যা নিয়ে অগাস্টের শেষের দিকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি হন তিনি।
সেখানেই রোববার মধ্যরাতে তার মৃত্যু হয় বলে তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।
সাজেদা চৌধুরীর ছেলে সাহাব আকবর চৌধুরী লাবু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রাত ১১টা ৪০ মিনিটে মা মারা গেছেন।”
বেনজির বলেন, সোমবার সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় সাজেদা চৌধুরীর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর বাদ জোহর মরদেহ নেওয়া হবে তার নির্বাচনী এলাকা ফরিদপুরের নগরকান্দায়। এরপর লাশ ঢাকায় ফিরিয়ে এনে বাদ আসর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
তিন ছেলে ও এক মেয়ের জননী সাজেদা চৌধুরীর স্বামী গোলাম আকবর চৌধুরী ২০১৫ সালে মারা গিয়েছিলেন।
সাজেদার জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ মে, তার বাবার নাম সৈয়দ শাহ হামিদ উল্লাহ এবং মা সৈয়দা আছিয়া খাতুন।
সাজেদা তরুণ বয়সেই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৬৯ সালে তিনি মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন সাজেদা চৌধুরী, তখন কলকাতা গোবরা নার্সিং ক্যাম্পের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন তিনি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৫ সালে তিনি বাংলাদেশ নারী পুনর্বাসন বোর্ডের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে বাংলাদেশ গার্লস গাইডের ন্যাশনাল কমিশনারও ছিলেন তিনি।
পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন সাজেদা। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়ে দেশে ফেরার পর তার সঙ্গেও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন সাজেদা।
১৯৮৬ থেকে ১৯৯২ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯২ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীতে ছিলেন।
ফরিদপুর-২ আসন থেকে তিনি অনেকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। ১৯৭৩ সালে দেশের প্রথম সংসদেও তিনি নির্বাচিত হন। এরপর বারবার তিনি ওই আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে আসছিলেন। ২০০৯ সাল থেকে টানা সংসদ উপনেতার পদে ছিলেন তিনি।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন সাজেদা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্বও শেখ হাসিনা তাকে দিয়েছিলেন। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনে গঠিত সংসদীয় বিশেষ কমিটির চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য ২০১০ সালে সাজেদা চৌধুরী স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত হন।